মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কি?

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কি?

আমরা আজকে আলোচনা করবো মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কিভাবে তার বিস্তারিত নিয়ে। আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন অন্যদের মাঝে।

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? কিংবা মোবাইল দিয়ে আউটসোর্সিং কিভাবে শিখবো প্রশ্ন যারা করেন আজকে এই পোস্টটি তাদের জন্য। আজকের এই পোস্টটির সম্পূর্ণরূপে পড়লে আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে মোবাইল দিয়ে ফ্রীলান্সিং শিখবেন।

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর যেসব কাজ করা যায়ঃ


মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সার ডট কমে হাজার হাজার জব ক্যাটাগরি রয়েছে তবে তার মধ্যে মাত্র কয়েকটা জব ক্যাটাগরি রয়েছে যেখানে মোবাইল দিয়েও কাজ করা সম্ভব। এই পয়েন্ট টা তে আমি শুধু আলোচনা করবো যে যে সেক্টরে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।

ট্রান্সলেশন


ট্রান্সলেশন হলো এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রুপান্তর। ধরুন, আপনি বাংলার পাশাপাশি হিন্দি এবং ইংরেজি তে খুব পারদর্শী। সেক্ষেত্রে আপনি এই ট্রান্সলেশন এর কাজ টি নিতে পারেন। যদি কোনো ক্লায়েন্ট আপনাকে বলে তার হিন্দি থেকে ইংলিশ ট্রান্সলেশন লাগবে, তাহলে আপনার হিন্দি এবং ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ এর স্কিল কাজে লাগিয়ে আপনি কাজ টি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ৩,৪ টা ল্যাংগুয়েজ এ স্কিল থাকা ভালো। আপনার যদি ট্রান্সলেশন এর স্কিল থাকে তাহলে আপনি এই কাজ টি মোবাইল দিয়েও করতে পারেন।

কনটেন্ট রাইটিং


এই ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন সাব ক্যাটাগরি রয়েছে। আর্টিকেল রাইটিং, ব্লগ রাইটিং, ব্লগ কমেন্টিং, রি-রাইটিং, অ্যাকাডেমিক রাইটিং, ফোরাম পোস্টিং, ঘোস্ট রাইটিং, প্রুফরিডিং, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি। এই সেক্টরে আপনি অসংখ্য কাজ পাবেন। মজার ব্যাপার হলো আমি যখন প্রথম ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি তখন মোবাইল দিয়েই আর্টিকেল লিখতাম। তবে সেটা লোকাল ক্লায়েন্টদের কাছে। মোবাইল দিয়ে প্রফেশনালি ফ্রিল্যান্সিং করার কথা মাথায় আনাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। তাই কেও যদি রাইটিং এ পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি মোবাইল দিয়ে লোকাল ক্লায়েন্টদের থেকে রাইটিং এর কাজ নিতে পারবেন।

একাডেমিক রাইটিং


অনেকেই আছে যারা চাকরির পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপ করার জন্য বড় একটা ডিগ্রি অর্জন করতে চায়। কিন্তু তারা যেহেতু চাকরি করে তাই পর্যাপ্ত টাইম পায় না জুমে ক্লাস করার কিংবা তাদের অ্যাসাইনমেন্ট করার। এ ক্ষেত্রে তারা জুমের রেকর্ডিং ক্লাসের রাইটিং এবং একাডেমিক এসাইনমেন্টগুলো ফ্রিল্যান্সারদের কে দিয়ে করিয়ে নেয়। আবার অনেক সময় এমন ও হয় যে বিদেশের অনেক স্টুডেন্ট লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করে। তাদের হাতে এনাফ টাইম থাকে না এএসাইনমেন্ট করার মতো। তাই তারা একজন ফ্রিল্যান্সার কে হায়ার করে তার একাডেমিক কার্যক্রমগুলো করে নেওয়ার জন্য। আবার দেখা যায়, কোথাও একটা সেমিনার হয়েছে। আপনার ক্লায়েন্ট সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেনি কিন্তু তার উপস্থিত থাকা দরকার ছিল। তাই সে সেমিনার এর ভিডিও থেকে যে তথ্যগুলো দরকার তা একজন ফ্রিল্যান্সার এর কাছ থেকে লিখে নেয়। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। যেহেতু এই কাজ টা কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত তাই এটি সিক্রেটলি করিয়ে নেওয়া হয়।

আর্টিকেল রি – রাইটিং


আর্টিকেল রাইটিং আর আর্টিকেল রি- রাইটিং মোটেই কিন্তু এক জিনিস নয়। আর্টিকেল রি- রাইটিং হলো আপনার বায়ার আপনাকে একটি আর্টিকেল দিবে এবং আপনি সেটা এদিক সেদিক করে দিবেন। কিংবা আপনার বায়ারের যে রকম ভালো লাগে উনি বলে দিবেন আর আপনি সেটা কে মোডিফাই করে দিবেন।

ব্লগ রাইটিং

বর্তমানে মানুষ ব্লগিং করে প্রচুর টাকা আয় করছে। বাংলাদেশে ইয়াং জেনারেশনের প্রায় ১০ জনের ভেতর ১ জনের ব্লগিং সাইট রয়েছে। কিছু টিপস ফলো করে ব্লগিং করে তারা অনেকেই সফলতা পাচ্ছে। আপনিও ব্লগিং ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে চাইলে নিচের আর্টিকেল টি পড়ুন।
ব্লগিং সাইটে ব্লগ লেখার জন্য অনেকেই রাইটার হায়ার করে থাকে। আপনিও হয়ে যেতে পারেন তাদের মধ্যে একজন। এক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন নিশের উপর ব্লগ লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। ধরুন আপনি একজন ক্লায়েন্ট এর হেলথ নিশ নিয়ে লিখে দিলেন তো আরেক জনের বিউটি কেয়ার নিয়ে ব্লগ লেখার দক্ষতাও থাকতে হবে। ব্লগ লেখার কাজটি আপনি মোবাইল দিয়েই করতে পারেন।

কাস্টমার সাপোর্ট


মনে করুন কোন ফোন কোম্পানি হতে পারে সেটা বাংলালিংক, তাদের কাস্টমার সাপোর্ট এর জন্য লোক দরকার। আপনি মোবাইল ফোন দিয়েই তাদের এই জব পোস্টে কাজ করতে পারবেন। সম্প্রতি বাংলালিংক এর মাই বিএল অ্যাপ থেকে ” প্যাকেজ এবং চার্জ” রিলেটেড প্রব্লেম ফেস করায় আমি my bl অ্যাপ থেকে একটি কমপ্লেইন্ট করি। এবং তারা সাথে সাথে আমার কমপ্লেইন্ট টি এক্সসেপ্ট করে আমার ফোনে একটি মেসেজ পাঠায় যে ৩০ মিনিটেএ ভেতর আমাকে কল দিয়ে আমার প্রবলেম সল্ভ করে দেওয়া হবে। তার মিনিট দশেক পর একজন লোক ফোন দিয়ে আমার সকল প্রবলেমের কথা শুনে তা সমাধান পাওয়ার উপায় বলে দিলো। কাস্টমার সাপোর্ট ঠিক এরকমই। আপনিও চাইলে মোবাইল দিয়ে এই কাজটি করতে পারেন।

ট্রান্সক্রিপশন


এটা কিছুটা ট্রান্সলেশন এর মতো। মনে করুন, আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি সেমিনার এর ভিডিও কিংবা অডিও দিলো, আপনি কিছু পরিবর্তন না করে সেই ভিডিও দেখে লিখে দিলেন এটাই হলো ট্রান্সক্রিপশন। এটা লিখার জন্য কিন্তু আপনার ল্যাপটপ থাকা লাগবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি ফোন দিয়েও কাজ টা করতে পারবেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন


কি শুনে অবাক হচ্ছেন যে মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে সম্ভব। হ্যাঁ সম্ভব। তবে বাইরের কোন ক্লায়েন্ট কে মোবাইল এ ডিজাইন করে দিতে যাবেন না। ধরুন আপনার একটি অনলাইনে বিজনেস আছে কিংবা আপনি কোনো কোচিং সেন্টার এর সাথে যুক্ত। তাহলে আপনি সেই কোচিং সেন্টার এর পোস্টার টি অনায়াসে বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার ফোনের মাধ্যমেই।

উপরে যে কাজগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই কাজগুলো মোবাইল দিয়ে যে ১০০% করা সম্ভব তাও কিন্তু না। মোবাইল দিয়ে করতে গেলে আপনি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ফেস করবেন। তাই আপনি যদি মোবাইলে খুব দক্ষ না হোন তাহলে এই কাজগুলো মোবাইল দিয়ে না করাই ভালো। কাজ খারাপ হলে আপনি লোকাল ক্লায়েন্টদের কাছ থেকেও কাজ পাবেন না।

 

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং নামের স্প্যামিং


আমরা ইউটিউব কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখি, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই স্প্যামিং। নিচে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাওয়া যেখানে বলা হয় যে ডেসক্রিপশন বক্সে একটি লিংক দেওয়া আছে সেই লিংক থেকে অ্যাপ ডাওনলোড করে দিনে ৩০০-৫০০ টাকা ইনকাম করুন। এবং তারা বিকাশে টাকা পেয়েছে এটাও দেখায়। কিন্তু সাধারণ একটা মানুষ যখন প্রলুব্ধ হয়ে অ্যাপ টি ডাওনলোড দেও তখন দেখে যে অ্যাপ টি ৭২ ঘন্টার ভেতর ২০টি গ্রুপ এবং ১০০ জন লোক কে রেফার করতে হবে। এখানেই কাহিনি শেষ না। যাদের রেফার করলেন তারা যদি অ্যাপস টি খোলে তবেই আপনি টাকাগুলো পাবেন।

 

এখন আপনার নলেজ থেকেই বলেন ৭২ ঘন্টায় এতো কনডিশন কি আপনার মানা সম্ভব? শুধু শুধু আপনার মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট। আবার দেখা যায় কোকা-কোলা থেকে আপনি iPhone 12 জিতেছেন এরকম কিছু মেসেজ। এগুলো আসলে কোকা-কোলা কোম্পানি বানায় না। বিশ্বস্ততা অর্জন করার জন্য কিছু স্প্যামার তাদের ব্র‍্যান্ডের নাম ইউজ করে লোকদের বোকা বানায়। তাই এইসব প্রতারণার হাত থেকে দূরে থাকুন।

আমাদের উদ্দেশ্য আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে উপকৃত করা। আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে প্রথমে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি সেগুলোর কোনো একটা ক্যাটাগরিতে স্কিল ডেভেলপ করুন এবং কখনোই উপরে উল্লেখিত স্প্যামিং এ পা দিবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *